-অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী

জনগণ মনে করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজের অর্থ আত্মসাতের মামলাটি একটি রাজনৈতিক মামলা। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ মামলা হয়েছিল। বর্তমান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও তখন ১৫টি মামলা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সব ক’টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদেরবিরুদ্ধেও শত শত মামলা হয়েছিল এবং তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আণ্ডাবাচ্চা দিয়ে এ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে।
এ মামলা নিয়ে জনমনে আরেকটি প্রশ্ন তা হলো দুর্নীতি দমন কমিশন তথা দুদকের নিরপেক্ষতা নিয়ে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটপাট করে যারা নিয়েছে তাদের নাম ঠিকানা সবই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু না করে দুই কোটি টাকার জন্য তারা এভাবে কেন উঠে পড়ে লাগল তা নিয়ে জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষ মনে করে বেগম খালেদা জিয়ার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্যই এ মামলা এ পর্যন্ত টেনে আনা হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতির মামলায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করলে তাদের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। আইউব খানের আমলে রাজনৈতিক মামলায় ৩০৩ ধারায় যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তারা পরে সমাজে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করেছে। বর্তমান সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিনের পিতাকেও আইউব খানের সময় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে তার কোনো ক্ষতি হয়নি।
তেমনি বেগম খালেদা জিয়ারও এ সাজার ফলে কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। কারণ খালেদা জিয়া একটি সামাজিক শক্তির নাম। সরকার চায় এ সামাজিক শক্তি দমন করতে। কিন্তু সামাজিক শক্তি দমন করা যায় না। যদি গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকে তাহলে এ সামাজিক শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় একে অ্যানোমিক মুভমেন্ট বলে। এতে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়। সরকার যদি খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায় এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা না করে তাহলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।

লেখক: জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।